ভায়বহ বন্যা পরিস্থিতির কারণ - সরকারী দল, বিরোধী দল ও মিডিয়ার ভারত ভীতি।
***********বাংলাদেশের বর্ত্তমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কথা সকলেই জানি। বিশেষজ্ঞদের মতে এবারের বন্যা বিগত ৬০ বছরের ভয়াবহতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আগামী ৫/৬ দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এই পর্যন্ত বন্যায় মৃত্যুবরণ করছেন ১০৭ জন, তন্মধ্যে ৯২ জন মৃত্যুবরণ করছেন বানের জলে ডুবে। উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় লাশ দাপনের মত ভুমিও বন্যার কবল থেকে মুক্ত না থাকায় অনেকেই মৃত স্বজনদের দাফন বা সৎকার করতে পারছেন না। বিষয়টি নিজের উপর নিয়ে চিন্তা করে দেখুন কেমন লাগে?
বন্যার দুটি কারণ, একটি হলো বৃস্টিপাত অন্যটি হলো উজানের ঢলের পানি। আমাদের মিডিয়াগুলোও এভাবেই প্রচার করছে। বৃস্টির পানি যতটা না এই ভয়াবহ বন্যার জন্য দায়ী তার চেয়ে হাজার গুণ দায়ী হচ্ছে উজানের পাহাড়ী ঢলের পানি।
এই পাহাড়ী ঢলের পানি কোথা থেকে আসছে? আমার বিশ্বাস আমাদের দেশের সকল দলের রাজনীতিবিদ, সচেতন ব্যক্তিবর্গ, বিজ্ঞজন এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা ভালভাবেই জানেন। ভারত বাংলাদেশের সাথে ৫৪ টি নদীর সবকটি বাঁধ খুলে দিয়েছে। এবং সবকটি বাঁধ দিয়েই সোনামীর মত প্রবল উচ্ছ্বাসে বাংলাদেশে পানি ঢুকে তলিয়ে দিচ্ছে দেশটা। মিনিট দুয়েক সময় নিয়ে ভিডিও ক্লিপটা দেখুন মাত্র ২ টা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকার ভিডিও দেওয়া হলো। এবার চিন্তা করুণ এইভাবে ৫৪ টি বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকলে দেশের অবস্থা কি হবে? যা হবার তাই হচ্ছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদীই আন্তর্জাতিক নদী হিসাবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের গৃহীত UN Watercourses Convention এর বিভিন্ন আর্টিক্যালে আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারের বিভিন্ন বিধান সন্নিবেশিত আছে, যাহা সদস্যভুক্ত যেকোন দেশ মেনে চলতে বাধ্য। বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশই জাতিসংঘের সদস্য দেশ বিধায় উক্ত কনভেশন মেনে চলতে উভয় দেশই বাধ্য। আর্টিকেল ৭ এ সুস্পষ্টভাবে "No-Harm Rule” অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই রুল অনুযায়ী - দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নদীতে কোন দেশ এককভাবে এমন কিছুই করতে পারবে না যাহার ফলে অন্য দেশের মানুষ বা প্রকৃতির কোন রকম ক্ষতি হয়। গুরুত্বপূর্ণ আর্টিক্যাল ৫, ৭ এবং ১০ এর সারমর্ম হচ্ছে -- “প্রতেক দেশ নিজ সীমানার পানি ন্যায়পরায়ণতা ও গ্রহণযোগ্য সমতার ভিত্তিতে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে অন্যদেশের মানুষ ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব না পরে। ক্ষতি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক চাহিদাকে বিশেষভাবে গুরত্ব দিতে হবে। মানুষের পানীয় পানি এবং ফসল উৎপাদনের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় প্রাধান্য দিতে হবে।” বস্তারিত জানতে ইতোপূর্বে আমার লিখা নীচের লিংকে পড়তে পারেন।
https://goo.gl/1Rak8c
আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ভারত অবৈধভাবে তাদের সুবিধামত বাঁধ বন্ধ করে আমাদেরকে খড়ায় মারে, আমাদের কৃষিকে ধ্বংস করে দেয়; আবার তাদের সুবিধামত বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদেরকে ভয়াবহ বন্যায় ভাসিয়ে দিলেও আমাদের দেশের কোন রাজনৈতিক দলের নেতারানেত্রীরা এইসব বিষয় নিয়ে কোন জোড়ালো প্রতিবাদ করছেন না, সরকারী দল ন্যায্য পানির হিস্যা বা বন্টনের জন্য বিষয়টি জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্তাপন করছে না। আবার বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধী দলের নেতানেত্রীও এর বিরুদ্ধে তোমন প্রতিবাদ করছে না। যাদিও এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু কিন্ত আমাদের রাজনীতিবিদরা নীরব। এই নীরবতার কারণ হচ্ছে ক্ষমতা। এটা বহুলাংশে সত্য যে, আমাদের রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেমের দূর্বলতা ও ক্ষমতার মোহকে কাজে লাগিয়ে ভারত আমাদের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বলা যায় ভারত তাদের স্বার্থ বিবেচনা করেই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়া নির্ধারণ করে। ক্ষমতার লোভ আমাদের রাজনীতিবিদদের (সরকারী বা অন্যান্য বিরোধী দলের) মনে ভারতের বিরুদ্ধে আইনত ও ন্যায়ত কথা বলতে ভীতির সঞ্চার করে। এই ভীতির কারণেই প্রতিনিয়ত ভারতের এমন অবৈধভাবে বাঁধ খোলা বা বন্ধ করার বিষয়ে কোন রাজনীতিবিদ প্রতিবাদ জানাচ্ছে না।
যেকোন দেশের নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সচেতনতা বৃদ্ধি, ইত্যাদিতে নিরপেক্ষ মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও আমাদের মিডিয়াগুলো এইসব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। কিছু মিডিয়া দায়সারা গোছের খবর হিসাবে প্রচার করলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বলছে ‘উজানের পানির ঢলে’। মিডিয়া নিরপেক্ষ হলে উজানের পানির ঢল না বলে ভারতের বাঁধগুলি খুলে দেওয়াকেই সরাসরি দায়ী করে খবর প্রচার করতো। এতে জনগন সহজে বুঝতে পারতো এই ভয়াবহ বন্যার মূল কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে ভারতের বাঁধ নিয়ন্ত্রণ। আমাদের বেশীরভাগ মিডিয়াই ভারতপন্থী, ভারতের দালাল তাই ইচ্ছাকৃতভাবেই এই দালালরা নিজেদের আর্থিক মুনাফা হারানোর ভয়ে বিস্তারিত লিখছে না এবং জনসচেতনতা সৃস্টি করছে না। মিডিয়াগুলো যদি সত্যটা প্রচার/প্রকাশ করে জনসচেতনতা সৃস্টিতে ভুমিকা রাখতো তাহলে আমার বিশ্বাস জনগন- সরকারী দল বা অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের উপর চাপ দিত ভারতের এহেন অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য - ফলশ্রুতিতে রাজনীতিবিদরা বাধ্য হতো এর প্রতিবাদ করতে।
পরিশেষে, এটাই বলবো রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার মোহজনক ভারত ভীতি এবং মিডিয়ার দালালীর মাধ্যমে আর্থিক মুনাফা হারানোর ভীতি যতদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত ভারতের অবৈধভাবে বাঁধ নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে - তত দিন গ্রীষ্মকালে খরায় এবং বর্ষাকালে ভয়াবহ বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে - মরতে হবে।
জয় বাংলা।
লন্ডন
১৬/০৮/১৭ ইং।
https://www.facebook.com/szmashrafulislam/
এই পেইজ থেকে কপি করা

Comments
Post a Comment